বাতাবি লেবু



বাতাবি লেবুর পুষ্টি

এই মৌসুমের ফল বাতাবি লেবু। ভিটামিন ‘সি’, বিটা ক্যারোটিন আর ভিটামিন ‘বি’তে ভরপুর বাতবি লেবু। গর্ভস্থ মহিলা, স্নন্যদানকারী মা ও সন্তান নিতে ইচ্ছুক নারীদের জন্য বাতিব লেবু যথেষ্ট উপকারী। এই ফলে লিমোনোয়েড নামে এক ধরনের উপকরণ রয়েছে যা ক্যানসারের জীবাণুকে ধ্বংস করে। বাতবি লেবুর রস শরীরের বাড়তি আমিষ ও চর্বিকে ভেংঙে আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে । শিরা-উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমতে বাধা দেয়। বার্ধক্য দূরে ঠেলতে ও ইনফেকজনিত সমস্যা (প্রাধানত ত্বক, মুখ, জিহ্বা) দূর করতে এই ফল রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। খাবার হজমের জন্য হজমকারী এনজাইম হিসেবে কাজ করে এই লেবুর রস। অতিরিক্ত গরমে আমাদের শরীরে ফোড়া হয়। যেকোনো চর্মরোগ, ফোড়া, ঘায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এই ফল। অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের পরে বাতাবি লেবুর রস অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির বাতবি লেবু রয়েছে।  বেশি পাওয়া যায় লালচে ও সাদা রঙের লেবু । দুটোই ভীষণ উপকারী। গরম, ঠান্ডাজনিত কারণ বা ঘাম জমে যে জ্বর হয, বাতবি লেবু তাদের জন্য দরকারি পথ্য। এই লেবু গাছের পাতাও পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে কচিপাতা খাওয়া যায়। যাঁরা নিয়মিত এই ফল খান তাঁদের ছোঁয়াচে রোগগুলো সহজে হবে না। তাই সুস্থ থাকতে বাতাবি লেবু খান। 

কাঁঠাল


রসালো কাঁঠাল 
 
তি উচ্চমাত্রার পটাশিয়ামে ভরপুর কাঁঠাল। শরীরের জন্য প্রযোজনীয় পানির সাম্যাবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে উপাদানটি। প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর থেকে যে লবন-পানি ঘাম আকারে বের হয়ে যায়, তা পূরণ করে পটাশিয়াম। উচ্চরক্তচাপ কমাতেও এটা কার্যকর। অর্থাৎ শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় লবন বের করে দেয়। ফলে নিয়ন্ত্রিত হয় রক্তচাপ। উচ্চমাত্রার কিলোক্যালরিও রয়েছে এই ফলে। ক্যালরি শরীরে কাজ করার শক্তি তৈরি করে। ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ ও আছে প্রচুর কাঁঠালে। এই উপাদানগুলো ত্বক ও চুলের উপর কাজ করে। রং ফরসা করে, মুখ, তালু, জিহ্বা, গলাসহ প্রোষ্টেট, ফুসফুস, নাররি জননতন্ত্রের ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এই ফল। কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আঁশ। এই আশকে বলে ডায়াটারি ফাইবার। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাকস্থলীর ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। আমাদের শরীরে রক্ত তৈরি করে ফরিক এসিড, ফোলেট ও আয়রন নামের উপকরণ। এই উপকরণগুলো রয়েছে কাঁঠালে। এই ফলের আমিষ বা প্রোচিন মাংসপেশিকে করে শক্তিশালী, শর্করা শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রেখে কাজ করার শক্তি দেয। কাঁঠারৈ যে চিনি রয়েছে, তা ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে ানিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগীদের অতিরিক্ত মিষ্টি কাঁঠাল পরিহার করাই শ্রেয়। তবে বেশি পুষ্টির আশায় অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে বদহজম বা ডায়রিয়া হব্ পাকা কাঁঠাল দ্রুত নষ্ট হয়। তাই ফ্রিজে রাখার পরিবর্তে খেয়ে নেওয়াই শ্রেয়। 

লিচু


লিচুর কথা

দৃষ্টিনন্দন ও সুস্বাদু ফল লিচু। বাংলাদেশেই রয়েছে নানা প্রজাতির লিচু। অতি উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়ামের বসবাস এই ফলে। ক্যালসিয়াম এমন একটি খাদ্য উপকরণ, যা হাড় , দাঁত , চুল, ত্বক, নখের জন্য ভীষণ জরুরি। বয়স্ক নারী যাঁদের মেনোপোজ (ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়ে গেছে, তাঁদের জন্য লিচু যথেষ্ট উপকার।ি কারণ এসব নারীদের অতিমাত্রায় ক্যালসিয়ামের অভাব হয়। পরিণতিতে দাঁত, হাঁড়, চুল, ত্বক, নখ দুর্বল হয়ে যায। অতি উচাচমাত্রার ভিটামিন ‘সি’র আশ্রয়স্থল এই ফল। ভিটামিন ‘সি’ মৌসুমি অসুখগুলো থেকে রক্ষা করে, ত্বক, চুলের  পুষ্টি জোগায়্ প্রচন্ড ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এতে রয়েছে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাভিন নামক ভিটামিন ‘ব’ কমপ্লেক্স। ভিটামিন ‘বি’ করপ্লেক্স শরীরের জ্বালা পোড়া, দুর্বলতা দূর করে। লিচুর ভিটামিন ‘এ’ রাতকানা কর্ণিযার অসুখ, চোখ ওঠা, চোখের কোনা ফুলে লাল হযে যাওয়া, জ্বরঠোসা (জ্বরের পরে ঠোটের দুই কোণাতে বা উপরে নিচে য়া হয়), জিহ্বার য়া, জিহ্বার চামড়া ছিলে যাওয়া এই রোগগুলো প্রতিরোধ করে। লিচু, তরমুজ, কাঁাঠাল-এগুলো গরম ফল। বেশি খেলে পেট গরম হয়ে ডায়রিয়া হবে যাবে। তাই নিয়মিত (যত দিন লিচু পাওয়া যায়) ও পরিমিত খাওয়াই শ্রেয়। আর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য অতিরিক্ত মিষ্টি লিচু পরিহার করা উত্তম।

খেজুর


মিষ্টি ফল খেজুর 

রুভূমির ফল খেজুর। কিন্তু এ দেশে রয়েছে নানা প্রজাতির খেজুর। প্রচুর পরিমাণে চিনি, শর্করা, চর্বি ও আমিষ রয়েছে এই ফলে। তাই নিয়মিত খেজুরের মৌসুমে যারা এই ফল খান, তাদের স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মলদ্বারে নানা রকম অসুখ হয়। মলদ্বার ফেটে ভেতরে ইনফেকশন বা ঘা হয়। অনেক সময় মলদ্বার দিয়ে রক্ত বের হয় । তুলনামূলকভাবে শক্ত খেজুরকে পানিতে ভিজিয়ে (সারা রাত) সেই পানি খালি পেটে খেলে কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়। পেটের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে খেজুর। এই ফল হজমক্ষমতা বাড়ায়। মুখের লালাকে ভালোভাবে খাবারের সঙ্গে মিশতে সাহায্য করে। ফলে বদহজম দূর হয়। গরম ঠান্ডাজনিত জ্বর বা সংক্রামক জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্টের বিরুদ্ধে লড়াই করে খেজুর। দীর্ঘদিন ধরে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য এই ফল ভীষণ উপকারী। কারণ, খেজুরে রয়েছে উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট। নেশাকারী ব্যক্তিদের শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গই ক্ষয় হয়ে যায়। এ ক্ষয় রোধ করে খেজুর। বাসায় তৈরি করা ঘিয়ে খেজুর ভেজে ভাতে মিশিয়ে খেলে পাতলা মানুয়ের স্বাস্থ্য ভালো হয় দ্রুত। স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত করার জন্য এই ফলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যারা প্রচুর পরিমাণে দৈহিক পরিশ্যম করেন, তাদের জন্য খেজুর আশীর্বাদস্বরুপ। একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে শক্তি দেয়। বাজারের প্যাকেট করা খেজুর খাওয়াই ভালো। প্যাকেটছাড়া খেজুর পরিহার করুন। 

জাম


পাকা জামের মধুর রসে

উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘এ’তে ভরপুর জাম আমাদের রক্ত পরিষ্কার করে, দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌছে দেয়। ফলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করে। ছোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ও সংক্রামক (ছোঁয়াচে) রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। রাতকানা রোগ ও চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে এমন রোগীর জন্য জাম ভীষণ উপকারী। জামে গার্লিক এসিড, ট্যানিস নামে এক ধরনের উপকরণ রয়েছে, যা ডায়রিয়া ভালো করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগ ও হরমোনজনিত রোগীদের জন্য এই ফল যথেষ্ট উপযোগী। কারণ, জাম রক্ত পরিষ্কার করে, শরীরের দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আমাদের নাক, কান, মুখের ছিদ্র, চোখের কোনা দিয়ে বাতাসে ভাসমান রোগ-জীবাণু দেহের ভেতর প্রবেশ করে। জামের রস এই জীবাণুকে মেরে ফেলে। পুরানো বাতের ব্যথা, হাড়ের সন্ধিস্থলের ব্যথা দূর করে জাম। এই ফলে নেই কোনো কোলষ্টেরল বা চর্বি। তাই ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার বা রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই । টনসিল, ল্যারিনজাইটিস, ফ্যারিনজাইটিস, সোর-থ্রট (এগুলো গলার ইনফেকশনজনিত অসুখ)-এর জন্য জাম ভীষণ উপকারী। দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, দাঁতের কোনায় খাবার জমে দাঁত ময়লা হয়ে যাওয়াসহ জিহ্বা,তালুর অসুখের জন্য মাউথওয়াশের প্রয়োজন হয়। জাম মাউথওয়াশ হিসেবে ভূমিকা পালন করে।